অবিভক্ত বাংলার ১ম মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মদিন আজ

0

অবিভক্ত বাংলার ১ম মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মদিন আজ

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মদিন: বাংলার গর্বিত সন্তান ও তাঁর ছেলেবেলার অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প

আজ ২৬শে অক্টোবর, এক মহামানবের জন্মদিন। তিনি বাংলার অমূল্য সম্পদ, সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার প্রতীক, এবং বাংলার ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় নেতা – শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। ১৮৭৩ সালের এই দিনে, অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার সাতুরিয়া গ্রামে এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। কঠোর পরিশ্রম, ন্যায়বোধ এবং মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসার মাধ্যমে তিনি শুধু বাংলার মাটি নয়, পুরো উপমহাদেশেই একজন গর্বিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

শেরে বাংলার শৈশব ও প্রাথমিক শিক্ষা

এ কে ফজলুল হকের শৈশব ছিল সংগ্রামের, শিক্ষার, এবং ত্যাগের এক বিরল উদাহরণ। তাঁর পিতামাতা, কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং সায়েরা খাতুন, অত্যন্ত ধার্মিক এবং শিক্ষিত ছিলেন। যদিও তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল সীমিত, তাঁরা তাঁদের সন্তানের জন্য সাধ্যমত শিক্ষা প্রদানের চেষ্টা চালিয়ে যান। ছোটবেলা থেকেই ফজলুল হক ছিলেন মেধাবী ও নিবেদিতপ্রাণ। নিজের পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি প্রতিটি শিক্ষাস্তরে নিজেকে অনন্য হিসেবে প্রমাণ করেন।

ছোটবেলায় ফজলুল হক গ্রাম্য মক্তবে পড়াশোনা শুরু করেন। মক্তবের শিক্ষাগ্রহণ শেষে তিনি ভর্তি হন বরিশাল জিলা স্কুলে। স্কুলে থাকাকালীন সময়েই তাঁর অসাধারণ মেধা এবং মানসিক দৃঢ়তার জন্য শিক্ষকরা তাঁকে অত্যন্ত স্নেহভরে দেখতেন। একান্ত নিঃস্বার্থ, সহজ-সরল এবং সবার প্রতি সমানুভূতির মনোভাব তাঁকে সহপাঠীদের মাঝেও প্রিয় করে তুলেছিল। ১২ বছর বয়সে স্কুল জীবনের সমাপ্তি টেনে তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এই শিক্ষাজীবনের অর্জন ও তাঁর কঠোর পরিশ্রম তাঁকে ভবিষ্যতে আইনজীবী এবং সফল রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে সাহায্য করেছিল।

উচ্চশিক্ষা এবং আত্মবিশ্বাসের উত্থান

বরিশাল থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর ফজলুল হক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং এই শিক্ষাজীবন তাঁর জীবন দর্শনকে আরও সুগভীর করে তোলে। কলকাতার মতো একটি শহরে পড়াশোনা করার সুযোগ তাঁকে বিভিন্ন শ্রেণি ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ দেয় এবং তাঁর মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করে।

কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিভার জোরে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একজন প্রতিভাবান আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি যেমন ভালো বক্তৃতা দিতে পারতেন, তেমনি যুক্তির মধ্যে দিয়ে মানুষকে সহজেই আপন করে নিতে পারতেন। আইনপেশায় তাঁর সাফল্য তাঁকে জীবনের পরবর্তী ধাপে এগিয়ে নিয়ে যায় – বাংলার সাধারণ মানুষের স্বার্থে রাজনীতিতে প্রবেশ।

শেরে বাংলার রাজনীতিতে প্রবেশ ও “বাংলার বাঘ” উপাধি

এ কে ফজলুল হক কৃষক-শ্রমিক, এবং মেহনতি মানুষের দুরবস্থা দেখে প্রভাবিত হন এবং তাঁদের স্বার্থ রক্ষার জন্য রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯২৯ সালে তিনি “কৃষক প্রজা পার্টি” প্রতিষ্ঠা করেন। এই পার্টির মাধ্যমে তিনি বাংলার কৃষকদের অধিকার, জমি নিয়ে ঝামেলা, এবং অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য অবিরাম লড়াই চালিয়ে যান। তিনি কৃষকদের পক্ষে "হক রিপোর্ট" নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন, যা কৃষকদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করেছিল এবং জমির অধিকার স্থায়ী করেছিল।

ফজলুল হকের সাহসী নেতৃত্বের কারণে তিনি "শেরে বাংলা" বা "বাংলার বাঘ" উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৩৭ সালে তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন এবং এই সময়ে বাংলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনা করেন। তাঁর এই সাহসী নেতৃত্ব, মানুষের প্রতি দায়িত্বশীলতা, এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অবদান তাঁকে বাংলার ইতিহাসে এক অনন্য স্থান এনে দিয়েছে।

শেরে বাংলার ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ

শেরে বাংলার জীবনের অন্যতম বড় বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর বিনয়, সাদামাটা জীবনযাপন এবং সাধারণ মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। রাজনীতিতে থেকেও তিনি কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থের পিছনে ছুটেননি, বরং সবসময় সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর বক্তৃতা এবং নেতৃত্ব মানুষকে শক্তি ও প্রেরণা জুগিয়েছে এবং বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছে।

শেরে বাংলার বিশ্বাস ছিল, জাতি যদি শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সুরক্ষিত হয়, তাহলে তাদের আর কেউ দমাতে পারবে না। তাঁর এই আদর্শে প্রভাবিত হয়ে অনেকেই শিক্ষা গ্রহণের প্রতি মনোযোগী হয় এবং আত্মসম্মান অর্জনে সচেষ্ট হয়। বাঙালির জন্য তাঁর ত্যাগ, সংগ্রাম এবং অবদান জাতির ইতিহাসে উজ্জ্বলভাবে স্মরণীয় হয়ে আছে।

তাঁর অবদান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষা

শেরে বাংলার জন্মদিনে আমরা তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আজও তাঁর আদর্শ এবং সংগ্রামের ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় কিভাবে মানুষ এবং দেশকে ভালোবেসে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করা যায়। তিনি কেবল বাংলার মাটিতেই নয়, সমগ্র উপমহাদেশে সাধারণ মানুষের নেতা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

#শেরে_বাংলা #একে_ফজলুল_হক #বাংলার_বাঘ #বাঙালির_গর্ব #কৃষক_প্রজা_পার্টি #বাংলার_নেতা #গণমানুষের_নেতা #বাংলার_ইতিহাস #বাংলার_আদর্শ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)