Belab Hussain Ali College Principal Bireshwar Chakraborty accused of corruption

বেলাব হোসেন আলী কলেজে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তী

নরসিংদীর সরকারি হোসেন আলী কলেজের অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে। তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলোতে উঠে এসেছে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও আর্থিক অনিয়মের মতো গুরুতর বিষয়। অভিযোগ রয়েছে যে, অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকে তিনি কলেজের সম্পদ ও অর্থ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। তবে, এই অভিযোগগুলো বারবার প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তিনি তার পদে বহাল থেকেছেন। কলেজের অডিট কমিটি একাধিকবার তার আর্থিক দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ পেয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে কলেজের সার্বিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। তিনি বেশিরভাগ সময় কলেজে অনুপস্থিত থাকেন এবং বাড়িতে থেকেই কলেজ পরিচালনার চেষ্টা করেন। সপ্তাহে হয়তো দুই-একবার কলেজে আসেন, তাও স্বল্প সময়ের জন্য। শিক্ষক ও কর্মচারীদের তিনি প্রায়ই হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে রাখেন এবং তার একক সিদ্ধান্তে কলেজের সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। শিক্ষকদের অভিযোগ, তার শাসন আমলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে এবং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপের কারণে শিক্ষার্থীদের ফলাফলও ক্রমশ খারাপ হচ্ছে।

২০১৮ সালে কলেজের অডিট কমিটি অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তীর আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়ার পরেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই অডিটে তার আর্থিক অনিয়মের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬৭৯ টাকা, যার মধ্যে মাত্র ৩ লক্ষ টাকা তিনি পরবর্তীতে কলেজ ফান্ডে জমা দেন। বাকি ৮ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬৭৯ টাকা তিনি এখনো কলেজ ফান্ডে ফেরত দেননি। বিষয়টি নিয়ে কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি ও ম্যানেজিং কমিটি একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করলেও কোন ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিয়াউর রহমান অভিযোগ করেন যে, অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তী কলেজের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র এবং পাসওয়ার্ড নিয়ে কলেজ ছেড়েছেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন ব্যয় এবং অন্যান্য জরুরি কাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, কারণ আর্থিক ক্ষমতা না থাকায় প্রতিটি কাজ করতে তাকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমনকি অধ্যক্ষ কলেজের পাসওয়ার্ড স্থানীয় একটি কম্পিউটার দোকানে দিয়ে কাজ করতেন, যার কারণে কলেজের কাজেও বিঘ্ন ঘটছে। এই অবস্থায় কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্ট হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

শিক্ষকরা অভিযোগ করেন যে, বীরেশ্বর চক্রবর্তী তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই কলেজের নিয়োগ এবং পদায়নের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি তার ইচ্ছামতো কমিটি গঠন করে একক ক্ষমতায় কলেজের সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন এবং তাদের বিভিন্ন সময়ে হুমকি দেন। এছাড়া তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি আদায়ে অস্বচ্ছতা বজায় রেখে দুর্নীতি করেছেন। যার ফলে কলেজের শিক্ষার মান এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

এই অবস্থায় কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা কলেজের এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ বা বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে আর্থিক ক্ষমতা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। কলেজের শিক্ষার মান পুনরুদ্ধার এবং প্রতিষ্ঠানটি আবারও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

অন্যদিকে, পলাতক অধ্যক্ষ বীরেশ্বর চক্রবর্তী নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন এবং তিনি নিয়ম মেনেই কলেজ পরিচালনা করেছেন। কিন্তু, অভিযোগের প্রমাণের ভিত্তিতে স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।